স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চায় না আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা। এতে দলের অভ্যন্তরে দ্বন্দ্ব বাড়ার পাশাপাশি নির্দলীয় ভোট প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হন জনপ্রিয় প্রার্থীরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা । বলেন, এতে করে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীকে সামনে রেখে গোটা দেশের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন কেন্দ্র ঘোষিত নেতারা। সিলেটের বৈঠকে দলীয় প্রতীক নিয়ে তৃণমূল নেতারা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশকে সমর্থন করেন অনেক নেতা। বর্তমান সরকার আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় ধাপে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ইউনিয়ন, পৌর, উপজেলা ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়েছে। এ কারণে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন নিয়ে অভিজ্ঞতা সুখকর নয় নেতাকর্মীদের কাছে। এজন্য দ্রুত বিষয়টি নিয়ে বিবেচনার জন্য দলের হাইকমান্ডের প্রতি দাবি জানিয়েছেন তারা। আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না রাখার দাবি জানিয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন।

গত রোববার কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে সিলেটে অনুষ্ঠিত দলের বিভাগীয় প্রতিনিধি সভায় এমন দাবি জানালেন তিনি। এ সময় ব্যারিস্টার ইমন জানালেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে স্থানীয়ভাবে বিভক্তি দানা বেঁধে ওঠে। প্রতীক বরাদ্দের ফলে স্থানীয়ভাবে প্রার্থীদের মধ্যে একটি দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে যায় এবং কর্মীরাও বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তিনি দলের বিভাজন, গ্রুপিং এবং অন্তর্দ্বন্দ্ব রোধে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক বরাদ্দ না রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ব্যারিস্টার ইমনের এই প্রস্তাবে এ সময় সম্মতি প্রকাশ করেন প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত থাকা দলের কেন্দ্রীয় সদস্য বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবু জাহির। এছাড়া সভায় উপস্থিত প্রতিনিধিবৃন্দ ব্যারিস্টার ইমনের দাবির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এদিকে দলীয় প্রতীকে সিলেটে আশানুরূপ সাফল্য পায়নি আওয়ামী লীগ।

সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী থাকার পর জয় হাতছাড়া হয়েছে। এ নিয়ে দলের ভেতরে দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। বিষয়টি খোদ দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার টেবিলেও যায়। যার কারণে সিলেটে দলের তিন শীর্ষ নেতাকেও শোকজ করা হয়েছিল। এই নির্বাচনের পর সিলেট সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের তৃণমূলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দাবি করেন, অনেক আওয়ামী লীগ নেতাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের বিপক্ষে কাজ করেছেন। ইউনিয়ন পর্যায়ের নির্বাচনেও একক আধিপত্য পায়নি আওয়ামী লীগ। বরং সিলেটে বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দিতে রীতিমতো ঘাম ঝরাতে হয়েছে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের। উপজেলা নির্বাচনে ১২টি উপজেলার মধ্য ৫টিতেই বিদ্রোহীরা জয়লাভ করেছেন। আর এই নির্বাচনে প্রতিটি উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি ছিল বেশি। তৃণমূলের নেতারা জানান, দলীয় প্রতীক দেয়া হয়েছিল দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে। কিন্তু এতে দলের আরো বিভক্তি বাড়ছে। এ কারণে এখনই দলীয় প্রতীকের প্রথা তুলে নেয়া উচিত। কারণ, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলে অনেক যোগ্যরাও মনোনয়ন পান না।